নাটোরে এমপির সামনে মেয়রের ওপর হামলা
নিজস্ব প্রতিবেদক (নাটোর) : নাটোরের নলডাঙ্গায় সংসদ-সদস্য (এমপি) শফিকুল ইসলাম শিমুলের উপস্থিতিতে পৌর মেয়র মনিরুজ্জামান মনিরের ওপর হামলা হয়েছে। হামলার এক পর্যায়ে মেয়র দৌড়ে তার কার্যালয়ে গিয়ে দরজা আটকে আত্মরক্ষা করেন। মেয়র মনির নলডাঙ্গা পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের নির্বাহী সদস্য। এ ঘটনার সিসিটিভির একটি ফুটেজ সোশাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে। রোববার (৩০ জুলাই) সন্ধ্যায় নলডাঙ্গা পৌরসভার সামনে এ ঘটনা ঘটে। হামলার ঘটনার প্রতিবাদে মেয়রের সমর্থকেরা সন্ধ্যার পর নলডাঙ্গা পৌর শহরে বিক্ষোভ মিছিল করেছে।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, নাটোর-২ (সদর ও নলডাঙ্গা) আসনের এমপি শফিকুল ইসলাম শিমুল রোববার বিকালে তার অনুসারীদের সঙ্গে গাড়িবহর নিয়ে নলডাঙ্গা উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে বঙ্গমাতা-বঙ্গবন্ধু ফুটবল টুর্নামেন্টের পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে যাচ্ছিলেন। এ সময় নলডাঙ্গা পৌরসভার মেয়র মনিরুজ্জামান মনিরের ভাতিজা শহিদ নজমুল হক সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি শাহরিয়ার ইশতিয়াক শিশির তার বন্ধু সেন্টুকে নিয়ে মোটরসাইকেলে করে একই পথে যাচ্ছিলেন। অনুষ্ঠানস্থলের কাছাকাছি পৌঁছালে উভয় পক্ষের অনুসারীদের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি হয়। একপর্যায়ে শিশির ও তার বন্ধু সেন্টুকে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে জখম করেন নলডাঙ্গা উপজেলা আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত সাধারণ সম্পাদক তৌহিদুর রহমান লিটন। মেয়র মনির ও তার ভাতিজা শিশির স্থানীয় এমপি শিমুলের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম রমজানের অনুসারী।
পৌর মেয়র মনির জানান, সন্ধ্যায় অনুষ্ঠান থেকে ফেরার পথে উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে এমপি শিমুলের সঙ্গে তিনি ও তার অনুসারীরা বিষয়টি নিয়ে কথা বলার জন্য দেখা করার চেষ্টা করেন। এ সময় তৌহিদুর রহমান লিটনসহ এমপি শিমুলের অনুসারীরা এমপি ও পুলিশের উপস্থিতিতেই দেশীয় অস্ত্র নিয়ে তার ওপর হামলা করে। মেয়র মনির বলেন, একজন হকিস্টিক দিয়ে আমার মাথায় আঘাতের চেষ্টা করে। অন্যরা সেটা প্রতিহত করায় অল্পের জন্য বেঁচে যাই আমি। কিন্তু আমাকে বাঁচাতে গিয়ে আহত হয়েছেন আমার সঙ্গে থাকা আনোয়ার হোসেন ও খোরশেদ আলী। এ সময় আত্মরক্ষার্থে দৌড়ে মেয়র মনিরকে তার কার্যালয়ে গিয়ে দরজা আটকে দিতে দেখা গেছে। হামলার আধ ঘণ্টা পর পরিস্থিতি শান্ত হলে আহতদের নিয়ে তাদের স্বজনরা রাজশাহীর বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করে।
মেয়র মনিরের অভিযোগ, হামলার সময় জেলা সৈনিক লীগের এক শীর্ষ নেতা পিস্তল বের করে পুলিশের সামনেই তাকে হুমকি দেন। মেয়র বলেন, আমার ভাতিজার ওপর হামলার ব্যাপারে আমি কেবল এমপির সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছিলাম। কিন্তু এমপি ও ওসির সামনে আমার ওপর উলটো হামলা হলো। ওসি পক্ষপাতিত্ব করে চুপচাপ থাকলেন।
হামলার ঘটনার প্রতিবাদে মেয়রের সমর্থকেরা রোববার সন্ধ্যার পর নলডাঙ্গা পৌর শহরে বিক্ষোভ মিছিল করেন। এ সময় শহরে উত্তেজনা দেখা দেয়। পরিস্থিতি সামাল দিতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়।
এ বিষয়ে নাটোর-২ আসনের এমপি শফিকুল ইসলাম শিমুল সাংবাদিকদের বলেন, মেয়র মনিরের ভাতিজা শিশির বেপরোয়াভাবে মোটরসাইকেল চালাচ্ছিল এবং আমার গাড়িবহরকে কোনো সাইড দিচ্ছিল না। পরে তৌহিদুর রহমান লিটনের সঙ্গে শিশিরের ধস্তাধস্তি হয়। এরপর বঙ্গমাতা-বঙ্গবন্ধু ফুটবল টুর্নামেন্টের পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে চলে যাই। ফেরার পথে মেয়র মনির আমার সঙ্গে কথা বলতে এগিয়ে আসছিল। তখন আমি ও এহিয়া চৌধুরী তাকে ধমক দিয়ে সরিয়ে দিই। সে কারণে সেখানে অপ্রীতিকর কোনো ঘটনা ঘটেনি।
তৌহিদুর রহমান লিটন সাংবাদিকদের বলেন, শিশির ও তার ক্যাডাররা এমপির গাড়িবহরের সামনে বেপরোয়াভাবে মোটরসাইকেল চালাচ্ছিলেন। তাদের বাধা দিলে ধাক্কাধাক্কি হয়। কিন্তু আমার জানা ছিল না যে, শিশির মেয়র মনিরের ভাতিজা। মেয়রের ভাতিজা জানার পর আমি মেয়রের কাছে ক্ষমাও চেয়েছি। এরপরও মেয়র মনির ও তার লোকজন পৌরসভার সামনে লাঠিসোঁটা নিয়ে অবস্থান করছিল এমপির বহরে হামলা করতে। এ খবর শুনে নাটোর থেকে ডিবি পুলিশের টিম সেখানে যায়। পরে এমপি ও আমাদের ফেরার সময় মেয়র মনির পথরোধ করলে উভয় পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা হয়। আমাদের হাতেও লাঠিসোঁটা ছিল। কিন্তু অন্য কোনো অস্ত্র ছিল না।
নলডাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কালাম বলেন, ঘটনার সময় ডিবি ও থানা পুলিশ তাৎক্ষণিকভাবে পরিস্থিতি শান্ত করেছে। তবে কারও কাছে তিনি কোনো অস্ত্র দেখেননি।
What's Your Reaction?