নাটোরে আ.লীগ-বিএনপি সংঘর্ষে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ, গুলিবর্ষন ও ভাংচুর : উভয়পক্ষে আহত ৩০
নাটোর শহরের আলাইপুরে বিএনপির অবস্থান কর্মসুচি চলাকালে সরকার দলীয় কর্মীদের সাথে বিএনপি নেতা কর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। উভয় পক্ষের মধ্যে ইট পাটকেল নিক্ষেপ, ভাংচুর ও গুলিবর্ষনের ঘটনা ঘটে। এ সময় পুলিশ ও গণমাধ্যমকর্মীদের ওপরও ইট পাটকেল নিক্ষেপ করা হয়। সংঘর্ষের ঘটনায় উভয়পক্ষে প্রায় ৩০ জনের মতো আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এদের মধ্যে গুরুতর আহত অবস্থায় বিএনপির একজনকে রাজশাহী এবং আওয়ামী লীগের দুই জনকে নাটোর আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
বিএনপির পক্ষ থেকে কাফুরিয়া ইউনিয়ন যুবদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি শরিফুল ইসলাম শরিফ, যুবদল কর্মী শৈবাল ও রনি ব্যাপারী গুরুতর আহত হয়েছে বলে জানানো হয়েছে। এদের মধ্যে আশংকাজনক অবস্থায় যুবদল নেতা শরিফকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এছাড়াও জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাচ্চুসহ আরো অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন। বাকীদের নাটোর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
অপরদিকে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে আওয়ামী লীগ নেতা অ্যাডভোকেট উজ্জল হোসেন সায়েম ও যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমিন বিপ্লবসহ বেশ কয়েকজন নেতা কর্মী গুরুতর আহত হয়েছেন।
আজ শনিবার দুপুর আড়াইটায় শহরের উপশহরে একই স্থানে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সভা আহ্বান করে। তবে একই স্থানে সভা হওয়া সত্বেও ১৪৪ ধারা জারি করেনি স্থানীয় প্রশাসন।
ঘটনাসূত্রে জানা গেছে, শনিবার দুপুর আড়াইটার দিকে শহরের আলাইপুর এলাকায় দলীয় কার্যালয়ের সামনে বিএনপি তাদের পূর্ব নির্ধারিত অবস্থান কর্মসুচী শুরু করে। জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক শহিদুল ইসলাম বাচ্চুর সভাপতিত্বে অবস্থান কর্মসুচীতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত বিএনপির কেন্দ্রিয় সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু বক্তৃতা করার সময় ওই অবস্থান কর্মসুচির খুব কাছাকাছি চলে আসে পৌর আওয়ামী লীগের একটি শান্তি মিছিল। এসময় উভয় দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে শুরু হয় পাল্টাপাল্টি ইট পাটকেল নিক্ষেপ। এক পর্যায়ে পুলিশী ব্যারিকেড ভেঙ্গে আওয়ামী লীগের কর্মীরা বিএনপি কার্যালয়ের দিকে ছুটে এলে তাদের লক্ষ্য করে পর পর দুই রাউণ্ড গুলি চালায় বিএনপি নেতা শহিদুল ইসলাম বাচ্চু। গুলিবর্ষনের সময় আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীরা দিকবিদিক ছোটাছুটির এক পর্যায়ে বিএনপি কার্যালয়ে ব্যাপক হামলা ও ভাঙ্গচুর চালায়। এসময় বিএনপির নেতা কর্মীরা তাদের কার্যালয়ের ভেতরে চলে গেলেও বাইরে থাকা কাফুরিয়া ইউনিয়ন যুবদলের সহ-সভাপতি শরিফ গুরুতর আহত হয়ে কার্যালয়ের সামনে লুটিয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে পুলিশ আওয়ামী লীগ নেতা কর্মীদেরকে সরিয়ে দিলে গুরুতর আহত শরিফকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায় তার সহকর্মীরা।
এ কিছু পরে তাৎক্ষণিক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি নেতা শহিদুল ইসলাম বাচ্চু, রহিম নেওয়াজ এবং দেওয়ান শাহিন জানান, তাদের পূর্বঘোষিত কর্মসুচি অনুযায়ী দলীয় কার্যালয়ের সামনে তাদের অবস্থান ধর্মঘট চলছিল। ধর্মঘটস্থলে বক্তব্য রাখছিলেন বিএনপি’র কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু। এ সময় আলাইপুর উপশহর মাঠে আওয়ামী লীগের ডাকা শান্তি সমাবেশে যাচ্ছিল সরকার দলীয় নেতা-কর্মীরা। দুলুর বক্তব্য চলাকালে সরকার দলীয় নেতা-কর্মীরা তাদের ওপর হামলা চালায়। এ সময় উভয়পক্ষের মধ্যে ইট-পাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। সরকার দলীয় কর্মীদের মারপিটে এবং ইটের আঘাতে যুবদলের এক কর্মী গুরুতর আহত হয়। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ ঘটনার জন্য বিএনপি’র কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলূ সরকার দলীয় নেতা-কর্মীদের দায়ী করেছেন।
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম রমজান দাবি করে বলেন, বিএনপি বিনা উস্কানিতে আওয়ামী লীগ কর্মীদের ওপর হামলা করেছে। তিনি অভিযোগ করেন, জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক শহিদুল ইসলাম বাচ্চু গুলিবর্ষন করেছেন। শহিদুল ইসলাম বাচ্চুকে অবিলম্বে গ্রেফতারসহ তার অস্ত্র উদ্ধার করার দাবি জানান তিনি।
আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ বিএনপি’র কার্যালয় থেকে তাদের লক্ষ্য করে গুলিবর্ষনের অভিযোগ করলেও পুলিশ গুলির কথা স্বীকার করেনি। এই ঘটনায় সংরক্ষিত আসনের মহিলা এমপি রত্না আহমেদ, অ্যাডভোকেট সিরাজুল ইসলাম, পৌর মেয়র উমা চৌধুরী জলি, সৈয়দ মোর্ত্তজা আলী বাবলু, অ্যাডভোকেট মালেক শেখ প্রমুখ নেতৃবৃন্দ চরম ক্ষোভ ও নিন্দা প্রকাশ করে উপযুক্ত বিচারের দাবী জানান।
নাটোরের পুলিশ সুপার সাইফুর রহমান জানান, বিএনপি -আওয়ামী লীগের মধ্যে সংঘর্ষ বাধলে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে। এই সংঘর্ষের ঘটনায় ৩ থেকে ৪ জন আহত হওয়ার কথা শুনেছেন বলেও জানান তিনি। পুলিশের পক্ষ থেকে কোন গুলিবর্ষন করা হয়নি এবং কেউ গুলিবিদ্ধ হওযার খবর পাওয়া যায়নি, বলেছেন পুলিশ সুপার। তিনি আরও বলেন, এ বিষয়ে অভিযোগ পেলে ঘটনা তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে।
What's Your Reaction?